বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের সার্বিক প্রভাব




বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাসের ক্রমবর্ধমান নির্গমনের ফলে সৃষ্ট গ্লোবাল ওয়ার্মিং সামপ্রতিক সময়ে নিরক্ষীয় দেশগুলির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভৌগলিক অবস্থান এবং আর্থ-সামাজিক কাঠামোর কারণে বাংলাদেশ গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর একটি অন্যতম হট স্পট। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব বৃদ্ধিতে কাজ করছে অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, বন উজাড় এবং জীবাশ্ম জ্বালানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার। কারখানা, যানবাহন এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে আমাদের বেঁচে থাকার অক্সিজেনে প্রতিনিয়তই বিপুল পরিমাণে যুক্ত হচ্ছে ক্ষতিকর কার্বন ডাই অক্সাইড, বিষাক্ত মিথেন আর নাইট্রাস অক্সাইড। সুন্দরবন সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাপকভাবে হারে বন উজাড়, সার্বিকভাবে হ্রাস করছে উদ্ভিদের কার্বনডাইঅক্সাইড শোষণ ক্ষমতা।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, তীব্র ঘূর্ণিঝড়, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত জলবায়ু পরিবর্তনের কয়েকটি দৃশ্যমান প্রভাব। আগমি শতকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১-২ মিটার বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চলগুলোর বিশাল এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে মেরু অঞ্চল ও হিমালয়ের বরফ গলে যাওয়া এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলের সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির তাপীয় সম্প্রসারণে ফলে বহুমাত্রিক ঝুঁকিতে আছে লক্ষ লক্ষ উপকূলীয় বাসিন্দা। জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে ঘূর্ণিঝড়গুলির ঘনঘন পুনরাবৃত্তি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, দীর্ঘায়িত খরা এবং বিধ্বংসী বন্যা ভোক্তভোগী মানুষের জীবন ও জীবিকাকে বিপর্যস্ত করার পাশাপাশি ঐ অঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থাকে নষ্ট করে দেয়।

ইন্টারগভার্মেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ, আইপিসিসির তথ্যানুসারে, প্রতি বছরে বাংলাদেশের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ৫ মিলিমিটার করে বাড়ছে। উপরন্তু, গত চার দশকে পূর্বের তুলনায় ঘূর্ণিঝড়ের ফ্রিকোয়েন্সি বেড়েছে ২০ শতাংশ। প্রাক-শিল্প যুগ থেকে দেশের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আঞ্চলিকও বৈশ্বিক তাপপ্রবাহে ফেলছে নেতিবাচক প্রভাব। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমিত করতে অনতিবিলম্বে পরিবেশ বিজ্ঞানী, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং এনজিও সংস্থাগুলোর যৌথ প্রচেষ্টা জরুরি।

জলবায়ু পরিবর্তনের বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সৌর, বায়ু ও পানির শক্তির মতো নবায়নণযোগ্য শক্তিগুলোর ব্যবহারে আরও তৎপর হতে হবে। বিপুল হারে গাছ লাগানোর পাশাপাশি কার্বন নির্গমন হার কমিয়ে আনতে হবে। অবকাঠামো শক্তিশালী করণ, আধুনিক আগাম সতর্ক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন জলবায়ু সম্পর্কিত বিপর্যয় কমিয়ে আনবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের, "জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল এবং কর্ম পরিকল্পনা" এবং পরিবেশের বিপর্যয়, অভিযোজন, সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড, বিভিন্ন সেক্টরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশন ও সার্বিক ক্ষয়-ক্ষতি হ্রাসে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখছে।

বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবেলায় বাংলাদেশ সামপ্রতিক সময়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি সাক্ষরের পাশাপাশি ও কনভেনশনগুলোতে জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলায় নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, বাংলাাদেশ প্যারিস চুক্তির অধীনে ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বর্তমান সময়ের তুলনায় আরও ১৫% কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব কমিয়ে আনতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সম্মিলিত পদক্ষেপের মাধ্যমেই একটি টেকসই ও নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত করা সম্ভব।

 

মো. রাফছান,

শিক্ষার্থী, মেরিন সায়েন্স, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

ইমেইল : rafsan.cu.ac@gmail.com

লেখক Md. Rafsan

মো. রাফছান একজন লেখক, কলামিস্ট, সংগঠক ও গ্রাফিক্স ডিজাইনার। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্স-এর শিক্ষার্থী এবং তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, চবি-র প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে তরুণদের সঙ্গে কাজ করছেন। সঠিক তথ্য, সচেতনতা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে একটি সমতা ও মানবিকতা-ভিত্তিক সমাজ গড়াই তাঁর মূল উদ্দেশ্য।

0 Comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন