করোনার ভয়াবহতায় ২৬শে মার্চ থেকেই দেশে আনুষ্ঠানিক লকডাউনের শুরু, সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয় ১৭ই মার্চ থেকে। সংকট মোকাবিলায় মে মাসের শেষের দিকে তুলে দেওয়া হয় লকডাউন, স্বল্প পরিসরে খুলে দেওয়া হয় বিভিন্ন ধরনের গার্মেন্টস সহ সব ধরনের সরকারি দফতর। এরই মাঝে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যাপারে জনতা পেয়েছে দফায় দফায় সিদ্ধান্ত, এই তারিখ, ঐ তারিখের নামে নিত্য নতুন নাটক । অনলাইনে ক্লাস করার জন্য অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের মোবাইল কিনার শিক্ষা লোনের নামে দেওয়া প্রস্তাবনা, এখনও পর্যন্ত থেকে গেছে বাস্তবায়নাধীন। দেরিতে করে হলেও ৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর অনলাইনের পাঠদান প্রক্রিয়া চলছে ধীরে, স্থীরে। করোনার কারণে
বাতিল করা হয়েছে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর পি এস সি ও জে ডি সি পরিক্ষা। গত ৩ আগষ্ট সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও করোনা কালীন প্রতিকূলতায় ছুটি বাড়ানো হয়েছিল ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় ছুটির বয়স বেড়েছে আবারও, অনির্দিষ্ট কালের জন্যই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকলেও মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্তে খুলে দেওয়া হয়েছে কওমি মাদ্রাসা।
করোনার মেঘে ডুবে গেছে শহর, পেরিয়ে গেছে পুরো ছয় ছয়টি মাস! শিক্ষা ব্যবস্থা পিছিয়েছে, পিছিয়েছে শিক্ষার্থীরাও। প্রয়োজনের তাগিদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দেওয়া হলেও খুলে দেওয়া হয়েছে জনবহুল গার্মেন্টস, বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি। সরকারি অফিস গুলোও চলছে পুরোদমে। রাস্তায় চলা হাজার যানবাহনে নেই কোন অস্বাভাবিকতা। সব অসুবিধে, দুশ্চিন্তা, ভয়াবহতা কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ঘীরেই। বাস্তবের করোনায় না হলেও কল্পনার করোনায় অভিশপ্ত হয়েগেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বার্তি সতর্কতার নামে শিক্ষার্থীরা হারিয়ে ফেলছে কিছু মূল্যবান সময়, তাদের ভবিষ্যৎ জীবন পড়ে গেছে অনিশ্চয়তার মুখে।
একটা গল্প বলি, আমার এক পাড়াত ভাই, ৫ম শ্রেণীতে পড়া এই ছোট্ট মানুষটার প্রতিদিন চার-পাঁচটা ক্লাস, সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত স্কুল, সন্ধ্যায় সামান্য পড়াশোনা করে তার দিনগুলো ভালোই কেটে যেত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হওয়ায় তার স্বাভাবিকতায় ব্যাঘাত ঘটেছে, বিপরীতে প্রচন্ড আকার ধারন করেছে তার মানুষিক সমস্যা। শুধু সে না, তার মত এমন হাজারও শিশু একই মানসিক সমস্যায় ভুগছে, ভুগছে বড়রাও। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করেও কি আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের ভালো রাখতে পারছি? উত্তরঃ- না, শুধু মানুষিক সমস্যাই না, এই এক সমুদ্র সময় ঘরে বসে কাটানোর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নান ধরনের ব্যতিক্রমী উপদ্রব, সৃষ্টি হয়েছে খুদা মন্দা, খিটখিটে মেজাজ, বার্তি ঘুমে শরীর স্বাস্থ্য নষ্ট হওয়ারত মত বড় বড় সমস্যা।
করোনার মেঘ কেটে গেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার যে দূরবর্তী চিন্তা ভাবনা সরকার দেখছে, এই অনিশ্চিত সম্ভবনায় শিক্ষার্থীদের ঘরে বসিয়ে রেখে আসলেই কি কোন উপকার হচ্ছে, না কোনো কালে উপকার হবে? বিটিভির করা অনলাইন ক্লাস আসলেইকি বাড়াচ্ছে জ্ঞানের পরিধি? উপযুক্ত পাঠদানে Zoom এ্যাপ'ই বা কতটুকু কার্যকর? আদৌও কি কিছু শিখছে তারা? নাকি অযথাই টাকা নষ্ট! টাকার অভাবে পরিবার না দেখতে পারা টিউশন মাস্টারগুলো কিংবা শিক্ষার্থীর ভেঙ্গে পড়া মানুষিক স্বাস্থ্যে আপনাদের কোন দুশ্চিন্তা নেই?
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যত দ্রুত সম্ভব খুলে দিন। বাচ্চারা ক্লাস করতে চায়, টিউশন মাস্টারের পরিবারের মানুষগুলো আরও কিছুদিন বাঁচতে চায়, অভিভাবকরাও একটু মুক্তি চায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আর যাইহোক করোনার ব্যাপারে স্বাস্থ্য সচেতন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করতে তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। প্রয়োজনে, প্রথমদিকে কয়েক মাস সপ্তাহের একেকদিন একেক বর্ষের ক্লাস চলবে। তবুও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিন, পর্যায় ক্রমে খুলে দিন অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোও।
মো. রাফছান আহমেদ
শিক্ষার্থী : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন