এই ব্যর্থতার দায় কে নেবে?





জীবনের প্রয়োজনেই বুঝি কখনো কখনো বেহায়া বনে যেতে হয়। কেউ হয়ে উঠে চরম মাত্রার নির্লজ্জ। জীবনের ষোলকলার একটা অংশ বুঝি এমন নিকৃষ্টই হয়! হাতে গোনা কয়েকজন সৌভাগ্যবান ছাড়া আর বাকি সবাইকেই এই সমীকরণের মুখামুখি হতে হয়। হাজার ব্যর্থতার পরেও নিজেকে অব্যর্থ হিসেবে প্রমাণ করার ক্ষীণ আশা নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষগুলোই জিতে যায় দিনশেষে। হার মেনে নেওয়া ব্যর্থ, ধৈর্যের পরীক্ষায় হেরে যাওয়া মানুষগুলোর পরিণতি হয়, অপয়া, নির্লজ্জ, কাপুরুষ, পাগল নামে। এই হতাশা, ডিপ্রেশন, নির্লজ্জতার জীবন খুবই হৃদয়বিদারক এবং আত্নঘাতি। যেটা একটু একটু করে পৌছে দেয় মৃত্যু দুয়ারে। নিজেকে প্রমাণ করার শত চেষ্টাও যখন ব্যর্থ হয়, ধৈর্য হারা এই অসহায়াগুলোর আত্নহত্যার পথটা ছাড়া আর কোনো পথই খোলা থাকে না। বেঁচে থাকার কিছু নিকৃষ্ট সুযোগ, কলঙ্কিত একটা ছোট্ট অধ্যায় একটু একটু করে নিয়ে যায় আরেকটু গভীরে। এগিয়ে দেয় মৃত্যু পথে আরও কয়েকটা পা। কিছু মানুষের বেখালিপনা, অন্যমনষ্কতার বলিদান হয় কিছু সাধারণ অসহায় মানুষ। পেটে লাথি পড়ে কারো কারো। সামান্য সুঁইটাই বিঁধে প্রকান্ড বিশকাঁটা হয়ে। চারপাশের স্বার্থসিদ্ধিকারী ভুল মানুষগুলোর একটা  ভুল সিদ্ধান্ত কারো জীবনকে বিপর্যস্ত করে দেয়। ফেলে দেয় ডিপ্রেশন নামক অন্ধকার কোনো গভীর খাদে। দীর্ঘসূত্রতার রেশ ধরেই এই রোগ একদিন ভীষণ ভয়াবহ রূপ নেয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পরিণতিটা হয় খুবই দৃষ্টিকটু, বিদঘুটে, খুব বেশি কুৎসিত আর হৃদয়বিদারক অথবা চরম রকমের জঘন্য।

পুনশ্চ : ডিপ্রেশন কোনো ছোট খাটো সমস্যা না। এটা একটা বিরাট ভয়ানক রোগ। নিজের কাজের বেখালিপনার বলিদান যেন অন্যকেউ না হয় সেই বিষয়ে সবাই সতর্ক থাকুন। ভুলের বিপরীতে অপমান না করে বুঝিয়ে দিন কোনটা সঠিক। হতে পারে আপনার এই ছোট্ট পদক্ষেপটাই কারো জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। আপনাকেই বলছি, হতাশাগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ান, এদের একটু সময় দিন। দুঃসময়ে একটু সঙ্গ দিন। কথা দিচ্ছি, আপনাকে ঐ মানুষটা আজীবন মনে রাখবে। ডিপ্রেস্ড মানুষগুলোকে দূরে ঠেলে নয় বুকে টেনে নিন, একটা সুস্থ কল্যাণকর আগামির পথে এগিয়ে দিন আরও কিছুটা সময়। এতে দশ, দেশ দুটোই উপকৃত হবে।

আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা, এই প্রতারক সমাজটাই কিছু মানুষকে অনেক বড় করে দেয়। প্রতিবেশীদের সামান্য অপমান কাউকে বানিয়ে দেয় শ্রেষ্ঠ। আশেপাশের মানুষগুলোর যতসামান্য অবহেলা পেরিয়ে কেউ আবার হাজার লোকের ভালোবাসা পায়। এই নষ্ট সমাজের ছোট্ট ছোট্ট অসামঞ্জস্যতাই এনে দেয় পরিকল্পিত সমাজ সৃষ্টির ধারনা। সামান্য পাড়া গাঁয়ের ক্রিকেট এক একটা সাকিব তৈরী করে। চরম বিপর্যয়ে হার না মানা মনোবলই একজন মাশরাফির জন্ম দেয়।  প্রিয়জনের কাছে পাত্তা না পাওয়া মানুষটা দিনশেষে একজন বিসিএস ক্যাডার। পাড়ার দুষ্টু ছেলেটাও আজ পরিবারের মধ্যমণি। কারন, মাস না শেষ হতেই সে চাহিদার অতিরিক্ত টাকা পাঠায়  নিঃসংকোচে।

দিনশেষে ভাল-মন্দ মিলিয়েই আমাদের সমাজ। প্রয়োজনে ভালোটাকে ব্যবহার করা আর খারাপটাকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া সমাজে নিউটন কেমন করে জন্ম নেবে? যত যাই বলেন, সমাজটা আমাদেরই, একান্তই নিজেদের। ভালোর প্রাপ্তি যদি আমাদের হাসায় তাহলে খারাপে চোখে জল না আসাটাও এক প্রকার প্রতারণা। আসলে, সমস্যাটা সমাজের না। সেটা আমাদের, হয়তো না জানার, না বুঝার, না দেখার আর নয়তো না শেখার। সমস্যা ডিঙ্গিয়েইতো বড় হতে হয়, হবে। সমাজের ভুল, অসামঞ্জস্যতা গুলোকে দুর্বলতা নয় শক্তি হিসেবেই ধরে এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিটা ভুলের বিপরীতে নিতে হবে একটা করে শিক্ষা। না পাওয়ার হতাশা থেকেই পেতে হবে প্রাপ্তি লাভের কাকুতিমিনতি। অবহেলার বিপরীতে ভালবাসা দিলেই দিনশেষে এই সমাজ বদলে যাবে। অন্তত কিছু কালো মন নিশ্চই সাদা হবে। আসলে দিনশেষে এই হাত পা ভাঙ্গা প্রতিবন্ধী সমাজটাই আমাদের প্রাপ্তি, সফলতা, উন্নতির মূল কারণ, এগিয়ে চলার মুল ভিত্তি। আলোকে কালো করে নয় কালোকে আলোকিত করেই নতুন একটা ভোর আসুক। যেদিন সমাজে কোনো অকারণে অঘটন ঘটবে না,যেখানে একমাত্র যোগ্যতমরাই হবে সর্বেসর্বা।

মো. রাফছান
মেরিন সায়েন্স, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

লেখক Md. Rafsan

মো. রাফছান একজন লেখক, কলামিস্ট, সংগঠক ও গ্রাফিক্স ডিজাইনার। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্স-এর শিক্ষার্থী এবং তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, চবি-র প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে তরুণদের সঙ্গে কাজ করছেন। সঠিক তথ্য, সচেতনতা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে একটি সমতা ও মানবিকতা-ভিত্তিক সমাজ গড়াই তাঁর মূল উদ্দেশ্য।

0 Comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন