সফল হওয়ার সহজতম উপায়





জীবন যুদ্ধে চরম বিপর্যস্ত আমার এক বড় ভাই বলেছিলেন, ভেসে যাওয়া নদী আর তার মধ্যে নাকি কোনো পার্থক্য নেই। বাস্তবতার নিয়মে নৌকার ন্যায় লাগামহীন ভেসে চলেছেন এঘাট থেকে ওঘাটে। বি এ পাশ করে প্রত্যাশিত চাকুরি পাওয়ার কথা থাকলেও এখন তার এম এ কমপ্লিট। অথচ, চাকুরি নামক সোনার হরিণ তার আজও জুটেনি। আসলে, আঠার বছরের পড়াশোনার পরেও যারা একটা কর্মের বিধান করতে পারে না, ঠিকঠাক পড়ালেখা না করতে পারলে ওয়ার্কসপই তাদের জন্য উত্তম। কেননা, আঠার বছর পড়াশোনা করেও বসে থাকার চেয়ে এই আঠার বছরে দুইচারটা ওয়ার্কশপের মালিক হওয়া যেত। চাকুরির এই প্রতিযোগিতা আমি, আপনিই তৈরী করেছি। সবাইকেই কেন ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার হতে হবে? সব গাড়ি এক লাইনে চললে জ্যাম তো হবেই। অথচ, যে যার মত করে আলাদা লাইনে চললে কোনো সমস্যা হত না। এনিয়ে দেশকে দোষারোপ করার পূর্বে প্রত্যেকেরই অন্তত একবার ভাবা উচিৎ। 

দুনিয়ায় কর্ম ক্ষেত্রের অভাব নেই। শহরের রাস্তার পাশে যে ছোটরাস্তাটা থাকে সেখানে ছোট্ট একটা বাতির নিচে কিছু জিনিষপত্রের বেঁচা কেনাও কয়েকটা জীবন বাঁচিয়ে দিচ্ছে। পরিশ্রম করার মানসিকতা না থাকলে কোথাও ঠাঁই হবে না। উপযুক্ত প্রার্থীদের মূল্যায়ন হবেই। সেটা কেবল সময়ের ব্যপার। অনুপযোগী মানুষ গুলোর একই লাইনে চলে আসাটা কেবল লাইনটাই বড় করে মাত্র, তাদের আটকাতে পারে না। লক্ষ্যটা কেবল সাফল্যের দিকেই থাকা উচিৎ। জন্মটা যেখানেই হোক, কর্মটা যেন ভালো হয় সেটাই যেন লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। ওয়ার্কশপ খারাপ জায়গা না। প্রতিটা কর্মকে সম্মান করলে আমাদের এই দুর্দিন দেখতে হত না। 'আমি লক্ষ টাকাতেই চাকুরি করব, নতুবা কিছুই করব না।' আমাদের এই আত্নঘাতি ভ্রান্ত ধারনা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। কিন্তু আমাদের এটা কে বুঝাবে? ভাগ্যের হাতে নিজেকে ছেড়ে না দিয়ে একটু পরিশ্রম করুন। সফলতা একদিন ঠিকই ধরা দিবে। কেননা, সফল-বিফলতার চাবিটাত আপনারই হাতে।

আমাদের পরাজয়ের পেছনে একটা কারণ দাঁড়া করানো যায়। আমরা যখন কোনো স্বপ্ন দেখি, তখন অনেক বড় স্বপ্ন দেখি। আমাদের পরিবেশ আমাদের দেখতে বাধ্য করে অনেকটা। কিন্তু যখন আমরা আমাদের লক্ষে পৌছাতে পারি না।  শুরু হয় হতাশা। এই হতাশা চারদিক থেকে ঘীরে ধরে আমাদের। অথচ, নিজেদের যোগ্যতা সম্পর্কে একটাবারও জানা হয়নি। প্রশ্ন করা হয় নি, আমরা কতটুকু জানি বা আমাদের জানার পরিধি ঠিক কতটা প্রশস্ত। 

আমার মতে এমন স্বপ্ন দেখা উচিৎ নয় যেটা আমাদের নিজেদের পক্ষে বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। স্বামর্থের বাইরে স্বপ্ন দেখাটা আমার চোখে এক প্রকার অপরাধই। যার শাস্তি স্বরূপ আসে হতাশা। প্রতিদান দিতে হয় নিজেকে, পরিবারকে। অথচ, যে সমাজ আমাদের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নটা দেখিয়েছিল তারা এখন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এমন স্বপ্ন দেখবইবা কেন যা বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। অনিশ্চিত প্রত্যাশার চেয়ে,হাতে পাওয়া অল্প কিছুটাও যে অনেক ভাল সেটা আমাদের কে বুঝাবে?  সুতরাং, প্রথমে নিজেকে প্রশ্ন করুন, কতটুকু পারবেন। আকাশ ছোয়ার স্বপ্ন সবার পূর্ণ হয় না, হবেও না। আমি আপনি সেই পথ চেয়ে বসে থাকলে কিছুই হবে না। কাউকে স্বপ্ন দেখাতেও একবার ভেবে নিয়েন। তার যোগ্যতার হিসেব কষেই পথ দেখিয়েন। এতে দুজনেরই মঙ্গল হবে। নিজের স্বামর্থের মধ্যে কিছু করুন, করার চেষ্টা করুন। ইনশাল্লাহ ভাল থাকবেন। হতাশা আপনার ছায়াও মাড়াবে না।

'সফলতা' চারটি কথার ফুলঝুরি নয়, যে মুখে বললেই হয়ে যাবে। সফলতা এমনও নয়, যে পাহাড় কেটে নদী বানাতে হবে। সফলতা আসলে একটা ব্যতিক্রমী বিষয়। তার চেয়েও ব্যতিক্রমী বিষয় হলো আমাদের চিন্তা চেতনা। মূলত এটাকে কে কিভাবে নেয় সেটাই মূল বিষয়।একজন দোকানদারের একদিনে এক হাজার টাকা আয় করা তার কাছে একটা যুদ্ধ জয়ের সমান। আর, তার কাছে এটাই সফলতা। কারো কাছে এই এক হাজার টাকাই আবার সামান্য কিছু। সফলতাটা আসলে একটি মনস্তাত্ত্বিক পরিতুষ্টির বিষয়। যেখানে একটা মানুষের প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রত্যাশার স্বার্থক বাস্তবায়নই তার কাছে সফলতা। সফলতা ঠিক যেমন ছোট হতে পারে ,আবার  এর বিস্তৃতি হতে পারে আকাশ সমান। আমার কাছে কঠোর পরিশ্রমের পর কোন একজনের স্বপ্ন পূরণ হবার ঘটনাটাই সফলতা। সফলতাটা মূলত কোনো একটি পরিশ্রমের পারিশ্রমিকস্বরূপ। যেখানে প্রত্যাশিত কিছু একটা পাওয়ার জন্য কোনো একজন কলুরবলদের মত পরিশ্রম করে দিনশেষে তার যথোপযুক্ত প্রাপ্যটা পায়। তার কাছে এটাই তার সফলতা। বার বার অকৃতকার্য হওয়া ছাত্রটির নিকট টেনেটুনে কৃতকার্য  হওয়াটাই হলো সফলতা। কিন্তু, বর্তমানে মানুষ ভাবে ভিন্ন কিছু। 

আমাদের স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়ার। কিন্তু পরিশ্রমের বেলায় কারো খবর নেই। স্বপ্ন বাস্তবায়নে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে আমাদের দেখা যায় না। অথচ, দিনশেষে এই মানুষ গুলোই নিজেদের ব্যর্থ বলে জাহির করে। দিনে দিনে ব্যর্থতাটাও একটা সাধারণ বিষয়ে পরিনত হয়েগেছে। যেখানে কেউই এই ব্যর্থতার দুর্নামগুচাতে এগিয়ে আসে না। এক পা এগোয় তো দুই পা পিছিয়ে যায়। সফলতা অর্জনে যেটুকু ধৈর্য প্রয়োজন সেটুকুই আমাদের নেই। অপেক্ষার প্রহর আর কঠোর পরিশ্রমের পর নিজের ধৈর্যের অগ্নি পরীক্ষা কয়জনই বা দিতে পারে ? সফলতা তাদেরই পাওয়া উচিৎ যারা অন্তত ধৈর্যের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ইতিবাচক মন মানসিকতা রাখে। সফলতা অর্জনে শেষ লক্ষে পৌঁছাতে আমাদের ধৈর্যশীল হওয়া উচিৎ। শূন্য থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিষয়টাকে একাধিক ভাগে ভাগ করে একটু একটু করে এগুলেই দিনশেষে সফলতা ধরা দেবে। ধৈর্যবান মেধাবী এবং পরিশ্রমীদের সফলতা কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র।

মো. রাফছান
মেরিন সায়েন্স, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

লেখক Md. Rafsan

মো. রাফছান একজন লেখক, কলামিস্ট, সংগঠক ও গ্রাফিক্স ডিজাইনার। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্স-এর শিক্ষার্থী এবং তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, চবি-র প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে তরুণদের সঙ্গে কাজ করছেন। সঠিক তথ্য, সচেতনতা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে একটি সমতা ও মানবিকতা-ভিত্তিক সমাজ গড়াই তাঁর মূল উদ্দেশ্য।

0 Comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন