কয়েক মাস আগেও যে ছেলেটা আত্নহত্যা করলো সে আমার ভাই, পুড়ে মরা মানুষ গুলো আমার পাড়ার কেউ। গাড়ি চাপায় আমরাই মরছি দিনদিন। আমরা মরতে চাইনা আর একটু বাঁচতে চাই। জীবনের নিরাপত্তা চাই। প্লিজ সেইভ আওয়ার লাইফ! বাস্তবতার ভাড়ি শিকল বয়ে বেড়াচ্ছি আমরা। আন্দোলনের সময় হলে আন্দোলন করি, কখনো ভেসে যাই, বেখালিপনার খরস্রোতে। দিনশেষে, কোথাও আগুনে পড়ল কেউ, কেউ মারা পড়ল গাড়ি চাপায়। সামান্য ভুলবুঝাবুঝিতে আত্নহত্যার পথটাই বেছে নেয় কেউ কেউ! এগুলো আসলে আজকের না। বহু বছর ধরেই এসব ঘটে চলেছে। তথ্য প্রযুক্তিগত প্রসারের বিনিময়ে আমরা ঘুম ভাঙলেই জানতে পারি দেশ বিদেশের আনাচে কানাচে ঘটে যাওয়া ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় গুলোও। আত্নহত্যা করার পর, গাড়ি চাপায় মরে যাবার পর, আগুনে পুড়ে যাবার পর সবাই সহমর্মিতা দেখাতে আসে, জানাতে আসে তাদের সামাজিকতার রশির গোড়া ঠিক কতটুকু পর্যন্ত বিসৃত। কিন্তু যথাসময়ে এসে চরম হতাশাগ্রস্ত মানুষটা কেমন আছে আমরা সেটা জানতে চাইনা। সমস্যা সমাধানের বিপরীতে আটকে দেয় ব্যস্ততার অযুহাত দেখিয়ে। ওর হয়ে, বিরুদ্ধে তর্কযুদ্ধ চালিয়ে যাই। মানুষগুলো মরার পূর্বে আপনাদের এই মানবতা থাকে কোথায়? ঘটনা শেষেই কেন এত সমাজ তান্ত্রিক, চিন্তাবিদদের সৃষ্টি হয়? কি লাভ হবে, জনগন গরম হবে, দুদিন পর আবার শান্ত হয়ে যাবে। আসলে আমরাই একটু একটু করে এই অস্থিতিশীল পরিবেশটা সৃষ্টি করেছি। আমাদের সময়ের নিরবতা আজ অসময়ে বিশকাটা হয়ে আমাদের হুল ফুটিয়ে চলেছে। এটা এখন প্রায় মহামারি ধারন করছে। সত্যি বলতে, আমাদের নেই কোনো লক্ষ, উদ্দ্যেশ্যটাও ঠিক জানা নেই। এর জন্য কে দ্বায়ী, সমাজ? আমরা? দেশ?
এই দেশে এক মৃত্যুকে ধামাচাপা দিতে সংঘটিত হয় আরেকটি মৃত্যু। একটা পাপকে ঢেকে দিতে সৃষ্টি হয় হাজারটা পাপ। আর বিচার! সেত কেবল গরীব, সাধারন মানুষেরই হয়। তাদের আজন্ম পাপ, তারা আইনের ফাঁক বুঝেনা। টাকার বিপরীতেই আজকাল বিচার মেলে। এদেশে কেবল একজনেরই সন্তান, পিতা, স্বজন হত্যার বিচার হয়, বাকিদের সন্তান, স্বজন, বাবাদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই যেন। আমি জানি, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বললে দেশ আমায় দেশোদ্রোহী বলে তাড়িয়ে দেবে। বলবে আমি রাজাকার, দেশের শত্রু। বাইরে থেকে অযথাই নাক গলানো মানুষের সংখ্যাটা নেহাতপক্ষে কম হবেনা। কেউ বুঝে বলবে আর কেউ না বুঝেই বলে উঠবে এটাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হোক। কিন্তু যদি প্রশ্ন করি, এই যে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, এসব করে শেষমেশ আমরা কি পেলাম? কোনো রকম দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই ভাবুন তো, এত কষ্ট, সংগ্রাম, রক্ত আর জীবনের বিনিময়ে আমরা আসলেই কি পেলাম! রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতার এই বেহাল দশা, নাকি রাজনীতির নামে সাধারন মানুষের জীবন নিয়ে পাঁয়তারার খেলা! ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার আমরা কি মূল্যটাই বা দিলাম? এত প্রাণের বিপরীতেও আজ আমরা নিরাপদ হতে পারলাম না? বলি , আর কত লাখ প্রাণ চাই, নিরাপত্তার বিপরীতে? নিরাপত্তার মত বড় মৌলিক চাহিদাটাই যদি মানুষ না পায়, তাহলে ত্রিশ লক্ষ মানুষের প্রাণ দেওয়ারই কি লাভ হলো?
আমি একজন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের হয়ে বলছি, শত ওভার ব্রিজ, শত নিয়ম কানুন করে কি হবে? এটা নিয়ে আন্দোলন কম হয়নি। হয়েছে, হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হবে। সত্যিটা এই যে, এদেশে নিয়মের সঠিক বাস্তবায়ন যতদিন সম্ভব হবেনা, ঠিক ততদিন এদেশে আবরারের মত এরকম হাজারো আবরার মারা যাবে। মৃত্যু ভয় আমার, আপনার, সবারই আছে। বারংবার ঘটা এই দূর্ঘটনাগুলোয় প্রশানের দুর্বলতা যেমন আছে, তার বেশি খামখেয়ালিপনা আছে ড্রাইভার দের মাঝে। বিশেষ করে তরুণ ড্রাইভার গুলোর মষ্তিষ্কে অনেক রকমের চিন্তা ঘুরে ফিরে। এছাড়া, দক্ষতায়ও এরা অনেকাংশে প্রবীণদের থেকে পিছিয়ে। এদের একটু ভুলেই হিসেবের খাতায় কাটা পড়ে শত আবারের নাম। আপনাদের এই ছোট্ট ভুল গুলো যদি আপনারা শুধরে নিতে পারেন, তাহলে দিনশেষে বেঁচে জাবে হাজার মায়ের বুকের ধন। লাইস্যান্স আসলে কিছুইনা। আজকাল, টাকা হলেই শত শত লাইস্যান্স পাওয়া যায়। তাই, লাইন্স দেওয়ার ব্যাপারে আরেকটু শতর্ক হতে হবে। দিনশেষে, আমাদের নিজেদের সচেতনাটাই মুখ্য বিষয়। আপনাদের কি বলবো, আমি নিজেই মাঝেমাঝে রাস্তায় অচেতন হয়ে যাই, যার দরুন আমাকে প্রাণও দিতে হতে পারে। তাই, রাস্তা চলাচল, পারাপারে একটু সতর্ক হোন। সময় নিয়ে সঠিক নিয়মে রাস্তা পার হোন। সময়ের মূল্য আছে ঠিকই, তবে তা অবশ্যই জীবনের মূল্যের চেয়ে বেশি। নিজে সচেতন হোন, অন্যকে সচেতন করুন। ইনশাল্লাহ, দূর্ঘটনা আমাদের ছায়াও মাড়াবেনা!
মো. রাফছান আহমেদ
মেরিন সায়েন্স, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন