কেবলই টুইস্টেড ইতিহাস ছাড়া বাংলাদেশে খুব বেশি পিউর ইতিহাসই নাই। এখানে ক্ষমতা এতটাই প্রবল যে, যারা ক্ষমতায় আসে তারাই ইতিহাস তৈরী করে, ইতিহাস বদলাইয়া দেয়, অন্যজনের ইতিহাস মুইছা দিয়ে নতুন করে নিজেদের ইতিহাস লিখে। ইতিহাস বদলায়ে দেওয়ার ইতিহাস এই দেশে দারুণ জনপ্রিয়, বহুল প্রচলিত।
এই দেশে ছোট বেলায়, বাবা ছেলেরে বলে, "তুই যে মাইর খাইলি, কয়টা মাইর তুই ওরে ফিরাইয়া দিছস? এখানে ছোট্ট ছেলেকে শেখানো হয়, "পরেরবার মেরে সাইজ করে দিবি, মেরে ভুত করে দিবি।"
অথচ বাস্তবতা ভিন্ন, আপনার যে প্রতিপক্ষ, আপনার যে শত্রু, সেও আপনার মতই মানুষ, একই স্রষ্টার সৃষ্টি, হয়তো আপনার আশেপাশেই সে থাকে। কথা হইলো, খাতা কলম, বাস্তবতার সবকিছু থেকে মুইছা দিয়েও আপনি তারে পুরোপুরিভাবে আউটপ্লে কইরা দিতে পারবেন না, একেবারেই বাদ দিয়ে দিতে পারবেন না, ঐরকমের কোনো সুযোগই নাই আসলে।
বাস্তবিক অর্থে এটা অসুন্দর, অমানবিক, অপ্রয়োজনীয়। অন্তত, আপনার নিজের গ্রৌথ কিংবা পূর্ণ বিকাশের জন্য হলেও তাকে আপনার আশেপাশে রাখা লাগবে, যেটা আপনার নিজের জন্যই জরুরী, মঙ্গলজনক, গুরুত্বপূর্ণ।
আর, আমাদের বাঙালিদের সমস্যা এখানেই, আমরা প্রতিপক্ষকে সবকিছু থেকেই বাদ দিয়া দিতে চাই, প্রবলভাবে, অনর্থক কিংবা জোরপূর্বক। আমরা আসলে কোনোভাবেই নিজেদের পরাজয় মাইনা নিতে চাইনা, নিজের পরাজয় ম্যানশন করতে চাই না, সত্যটা প্রকাশ করতে চাই না।
অথচ, সত্যটা সত্যই, সেটা আপনি জয়ী হলেও, বা পরাজিত হলেও। এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই, মুছে ফেলার কোনো সুযোগ নেই। দমননীতির মাধ্যমে আজ আরেকজনের ইতিহাস আপনি পাল্টায়ে দিলে, কাল অন্য আরেকজন আপনার ইতিহাস পাল্টায়ে দিবে, বদলাইয়া দিবে। গত কয়েক দশক ধরে, এমনটাই চলছে আমাদের দেশে।
এজন্যই দেখবেন, একদল ক্ষমতায় থাকলে অন্যদল নিজেদের বাড়িতে পর্যন্ত থাকতে পারে না। ক্ষমতার প্রাদুর্ভাব কিংবা অবৈথ ভোগদখলে যাচ্ছেতাইভাবে ইতিহাস বদলায়ে দেওয়ার এই অপচর্চা বন্ধ করে সত্য ও নির্ভুল তথ্যের প্রচার ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করা গেলেই এই সমাজ বদলে যাবে, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের আগামির প্রজন্ম পাবে একটা নিরাপদ বাংলাদেশ।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন