মানবিকতার কুৎসিত এক স্তর




দেশটা দিনদিন নষ্টদের অধিকারে চলে যাচ্ছে। নিয়ম থাকলেও কোথাও সেই নিয়মের নেই যথাযথ প্রয়োগ। রূম্পাকে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে একাত্তরে অর্জিত নয় মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতার এই বেহাল দূরাবস্থার আরো একটি প্রায়শ্চিত্ত করলো বাংলালাশ। জানিনা, এই অপয়া সংস্কৃতির সংক্রামক ব্যাধিটা ঠিক কোন প্রতিষেধকে দূর হবে। হিংস্র নপুংসকদের সংখ্যাটা দিন দিন বেড়েই চলছে। পত্রিকা খুললেই নতুন করে আবিষ্কৃত হয় আরো কত শত অমানুষের। মানবতা ডুবে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে চুপিসারে, তিলে তিলে, নিরবে নিভৃতে। 

কয়েকদিন ধরেই ফেনির সেই নপুংসকটার কথা মনে পড়ছে, নিজের ইচ্ছে পূরণে ব্যর্থ কাপুরুষটা ঐ মেয়েটাকে আগুনে পুড়িয়ে মারলো। এভাবে, একদিন নুসরাত,  একদিন তনু, একদিন সাবিহা, একদিন খাদিজা, একদিন রত্নার মত  করে সবার মাঝেই এই নপুংসকদের থাবা ছড়িয়ে পড়বে। ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে উদ্ধারকৃত স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রূবাইয়াত শারমিন রূম্পাও ছাড়া পায়নি এই অমানুষ গুলোর হাত থেকে। 

এই নরখাদকদের থাবা থেকে আমাদের নিজেদের  বোনরা রক্ষা পাবে তো? আর আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম? বিচার পায়নি পূর্বেরজনরাও। রূম্পার মৃত্যুও হয়তো হাঁটছে একই পথে। ধর্ষণ পরিনত হচ্ছে বিচারহীন অধিকারে। এই অনিয়মের সুযোগটা খুব করেই বেড়ে যাচ্ছে, সুযোগ নিচ্ছে নামধারী কিছু ভন্ড প্রতারকাকার সাধু। পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম শাস্তিটাই যেন ওদের দেওয়া হয়। প্রশাসন নয়, স্রষ্টার কাছেই বিচার রইল! হে আল্লাহ, আমাদের সবাইকে এসব নরদানবের আগ্রাশন থেকে হেফাজত করুন।

মানুষ আর মানুষের জন্য নেই। ভূপেন হাজারিকার গানের স্বার্থকতা ঘুচে গেছে আরও অনেক আগে। ছোট বেলায় নানুর বাড়িতে শেখা ভ্রাতৃত্ব, আতিথীয়তা, মিলমিশের এখন আর চাইলেই দেখা মেলেনা। এক ঘরের আলু ভর্তা খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর দেওয়া মানুষ গুলো আজ হারাতে চলেছে। মানুষে মানুষে ভালোবাসার বিপরীতে দিনকিদিন বেড়েই চলেছে নিয়ন্ত্রণহীন কলহ।  ঘরে পরে মরে থাকলেও কারো কিছু যায় আসেনা এখন। 

অনিয়মের এই খেলা পৌঁছে গেছে দূরান্তের সেই শান্ত, নিবির গ্রাম গুলোতেও। স্বার্থ প্রয়োজনে দুই দেয়ালের মাঝে তৃতীয় দেয়াল উঠছে আজকাল। সুযোগ পেলেই উঠে বসছে আপন রক্তের উপর, খুবলে খাচ্ছে জ্যান্ত শরীর, টাকার ভাগবাটোয়ারা হচ্ছে জোরের শক্তিতেই। জীবনের নিরাপত্তা কমে গেছে পূর্বের তুলনায় শত গুণ। হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ, জখমের মত অপকর্মের তালিকা দিনকিদিন বড়ই হচ্ছে। আধুনিকতার নামে মানুষ নেমে গিয়েছে মানবিকতার কুৎসিত এক স্তরে। যেভাবে আধুনিকতার খেলায় মেতে উঠেছে দেশ, নপুংসকদের সংখ্যা যে হারে বেড়ে চলেছে, যেভাবে মানবতার বিলুপ্তি ঘটছে, কয়েক যুগ পর পৃথিবী কোথায় এসে দাঁড়াবে?

মো. রাফছান
মেরিন সায়েন্স, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

লেখক Md. Rafsan

মো. রাফছান একজন লেখক, কলামিস্ট, সংগঠক ও গ্রাফিক্স ডিজাইনার। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্স-এর শিক্ষার্থী এবং তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, চবি-র প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে তরুণদের সঙ্গে কাজ করছেন। সঠিক তথ্য, সচেতনতা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে একটি সমতা ও মানবিকতা-ভিত্তিক সমাজ গড়াই তাঁর মূল উদ্দেশ্য।

0 Comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন