জীবন চলার পথে আমাদের মানবিক হতে হবে





বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কেউ কখনও বন্ধু হয় না। জনাদুয়েক মানুষ হয়তো আপনাকে নিয়ে ভাবতে পারে, রাখতে পারে হিসাবের খাতায়। তবে, বাদবাকি বেশিরভাগ মানুষের প্রায়োরিটি লিস্টেই আপনি থাকবেন না। এই ছোট্ট বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আপনার হাজারটা বন্ধু হবে, ডিপার্টমেন্ট, হল, মেস, এসোসিশেয়েন আর বিভিন্ন সংগঠন মিলিয়ে থাকবে শখানেক বড় ভাই, বোন। কিন্তু, দিনশেষে আপনি ঐ একাই, নিসঃঙ্গ শেরপা। চোখের দেখা আর মুখের কথায় আপনার হাজারটা প্রিয় মানুষ থাকলেও আপনি তাদেরকে হৃদয়ে ধারণ করতে পারবেন না, অনুরোধ, আবদারে পারবেন না নিশ্চিন্ত হতে। আপনার বিপদের দিনে এনাদের অনেকের দরজাতেই তালা লেগে যাবে, আট দশটা সাধারণ ঘটনার মতই বিবেচ্য হবে আপনার সাময়িক অসহায়ত্ব। 

অভিযোগ, পরামর্শ, সাময়িক বার্তা আর দুদন্ড হাসি বিনিময়ে সবাইকে পেলেও দ্বায়িত্ব, ভালোবাসা, নিশ্চয়তা আর নির্ভরতায় আপনি এই হাজারটা প্রিয় মানুষের কাউকেই খুঁজে পাবেন না। জনাদুয়েক ব্যতিক্রম থাকে সবকিছুতেই, তারা হয়তো মাঝেমাঝে খুঁজ নিবে, আপনার বিপদে-আপদে একটু করে দেখবে সময় করে, সহযোগিতা করবে সাধ্যমত। কিন্তু আপনার আশেপাশের বেশিরভাগ মানুষের কার্যক্রমই এর সম্পূর্ণ বিপরীত, বেশির ভাগই ব্যক্তিকেন্দ্রিক। তাদের কাছে আপনাকে ভালো না বাসার হাজারটা কারণ থাকলেও আপনাকে ভালোবাসার একটিও কারণ খুঁজে পাবেন না। হয়তো দেখা যাবে একই বিছানায় ঘুমানো দুটো মানুষও একজন অপরজনের মনের অবস্থা বুঝতে পারছেন না। সময় অসময়ে একজন অপর জনকে পাচ্ছেন না নিয়মিতভাবে। 

এনারা সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, নিজেকে গুছিয়ে ওঠার দৌড়ে কে কাকে ছাড় দেয় বলেন? এজন্য তারা মাঝে আপনাকে দেখেও দেখবেন না, শুনেও শুনবেন না, বলেও বলবেন না। এটাই তো স্বাভাবিক, খুব বেশি স্বাভাবিক বরং, পৃথিবীটাই চলছে এই নিয়মে। সময়, সম্পদ, প্রতিপত্তি, মেধা, যোগ্যাতা, প্রয়োজন, ভালো লাগা আর ভালো থাকায় মানুষ আলাদা হয়ে যাচ্ছে রুটিন করে। উটকু ঝামেলা মনে করে পাশের জন দ্বায়িত্ব নেয় না পাশের জনের। সময়স্রোত, ইচ্ছা আর ক্ষমতার বেদখলে একই মায়ের পেটের ভাই ই বনে যাচ্ছে ঘোর প্রতিপক্ষ। স্বামর্থ থাকা সত্তেও প্রিয় মানুষের বিপদের দিনে এনারাই দেখায় নির্বিকারত্ব। কেনই বা মানুষ মানুষের উপকার করবে বলুন? নিজের স্বার্থ শিকে বসিয়ে কে'ই বা করতে চাইবে অন্য জনের উপকার!

মানুষকে উপকার কিংবা ভালোবাসার বিপরীতে পাওয়া অদৃশ্য বিনিময়ে নিরুৎসাহী আমি, আপনি, আমরা সবাই। সহযোগিতার বিপরীতে সহযোগিতা না এলে এই সম্পর্ক কোনো ভাবেই টিকবে না, সময়-অসময়ে যায়গামত পৌঁছাবে না সহযোগিতার হাত। হতাশ নয়, বরং এই কঠিন, নিদারুণ বাস্তবতা মেনে নেওয়াই সময়ের সেরা সমাধান। এই সত্য যদ দ্রুত আপনি আত্মস্থ করতে পারবেন, আপনার ভালো থাকার সম্ভাবনা ততই বেশি। হাজার মানুষের মাঝেও যে দুই চারটা মানুষ, ভিন্ন মানুষের, আপনার খবর রাখে তাদেরকে আমার সশ্রদ্ধ সালাম, এক সমুদ্র ভালোবাসা। আর, বাস্তবতার জটিল-কঠিন নিয়ম আর জীবনের ভাঁজে আটকে পরে যারা প্রিয়জন ভুলে গেছেন, ভুলে গেছেন বন্ধু, ছোট ভাই আর প্রতিবেশিদের, অনুগ্রহপূর্বক সেই মানুষগুলোর একটু খোঁজ নেওয়ার আহ্বান রইল। 

মোঃ রাফছান
শিক্ষার্থী, মেরিন সায়েন্স, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

লেখক Md. Rafsan

মো. রাফছান একজন লেখক, কলামিস্ট, সংগঠক ও গ্রাফিক্স ডিজাইনার। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্স-এর শিক্ষার্থী এবং তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, চবি-র প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে তরুণদের সঙ্গে কাজ করছেন। সঠিক তথ্য, সচেতনতা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে একটি সমতা ও মানবিকতা-ভিত্তিক সমাজ গড়াই তাঁর মূল উদ্দেশ্য।

0 Comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন